মোটিভেশান দেয়া লোকগুলো কি ভুয়া? Self-Help Genre | Explained by Enayet Chowdhury

প্রথমেই ক্লিয়ার করে নেই।

বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই এইটা আমি না!


মুদ্রার এপিঠ:

মুদ্রার ওপিঠ:

স্যার সলিমুল্লাহ খান: আজকের বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী সরে গিয়েছে। এটা হলো স্কিল তৈরি করা। এক্সেলেন্স মানে টাকা পয়সা করা। আপনার গুরু যখন নষ্ট হয়েছে অ্যামেরিকানদের পঁচা বই পড়ে! ডেল কার্নেগীর বই আমাদের দেশে মুড়ি মুড়কির মত বিক্রি হতো না আমাদের ছাত্রজীবনে!?

 

১৮৮৮ সালের ২৪শে নভেম্বর, যুক্তরাষ্টের Maryville, Missouri তে জন্ম নেয়া এই ব্যাক্তির নাম ডেল কার্নেগী

আধুনিক যুগের মোটিভেশনাল কিংবা আত্মউন্নয়ন মূলক বইয়ের যে জোয়ারটা শুরু হইসে, তার পিছনে গডফাদার হিসেবে দায়ী করা হয় এই ডেল কার্নেগীকে। তার লেখা “How to Win Friends and Influence People” এবং “How to Stop worrying and Start Living” বইগুলা আজকের দিনেও নীলক্ষেতের মোড়ে মোড়ে বিক্রি হয়। কিন্তু শুরুতেই দেখছেন এই লোকের সমালোচনার অভাব নাই। আসলে মানুষ চাইলেই কি নিজের চেষ্টায় নিজের অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে? নাকি এইখানে সিস্টেমকে একসাথে কাজ করা লাগে? ডেল কার্নেগী যে সময় জন্মেছিলেন ওইসময় সেল্ফ-হেল্প বা মোটিভেশন জনরাটার এতটা উত্থান কেন ঘটলো? এবং এই জনরার মূল সমালোচনাগুলা আসলে কোন জায়গায়? ডেল কার্নেগী কি আসলেই আত্মহত্যা করছিলেন শেষ বয়সে আইসা? এসব সহ সেল্ফ-হেল্প জনরার পুরো ব্যাপারটি আমি আজকে আলোচনা করবো। তো চলুন, শুরু করা যাক।

 

বড়লোক্স!

প্রথমে একটু আলোচনা করতে হবে এই মোটিভেশন বা এই সেল্ফ-হেল্প জনরাটার আসলে শুরুটা হইসিলো কোত্থেকে? আপনারা তো জানেন, ক্যাপিটালিজমে দুইটা ক্লাস থাকে। একটা হচ্ছে মালিক শ্রেণী, যারা জমির মালিক/কারখানার মালিক, এদেরকে আমরা বুর্জোয়া বলতেছি। আরেকটা হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণী যেমন কারখানার শ্রমিকরা, রিক্সাওয়ালা, ভ্যানচালক এই লোকগুলা।

গরিবস!
Beth Blum

হার্ভার্ড এর প্রফেসর Beth Blum, উনি উনার একটা বই The Self-Help Compulsion এর মধ্যে উল্লেখ করছেন, ১৮৫৭ সালে George Jacob Halyoake এর একটা বই ছিল যেটার নাম ‘Self-Help by the People’। তখনকার যে লেবারার বা শ্রমিক শ্রেণী ছিল (ওয়ার্কিং ক্লাসটা), ওরা পাঠচক্রের মতন একসাথে বইসা এগুলোকে ম্যানিফেস্ট এর মত পড়তো। ওরা নিজেদের অরগানাইজেশন এর ভিতরে বিভিন্ন মিটিং এরেঞ্জ করতো, যাতে করে ওরা নিজেদেরকে আরো বেশি ডেভেলপ করতে পারে বিভিন্ন কাজ করার ক্ষেত্রে। খেয়াল করেন, ওই সময় পর্যন্ত কিন্তু প্রফেশনালদের মাঝখানে এই সেল্ফ-হেল্প ব্যাপারটা জনপ্রিয় ছিল। পুরা জনসাধারণ এর জন্যে ওইটা কিন্তু তখনও কমন হয় নাই। ঊনবিংশ শতাব্দীর ৪০-৬০ এর দশকে নাইজেরিয়ার দক্ষিণ পূর্ব দিকে কিছু চটি বই বিক্রি

“Hard”

হইতো(ছোট ছোট বই)। যেমন: “How to Avoid Corner Love and Win Good Love From Girls”, “Money Hard to Get but Easy to Spend” এই ধরনের চটি মোটিভেশনাল বই।

ওইটা যেই মার্কেট এর মধ্যে বেচা হইতো, ওই মার্কেট এর নাম “Onitsha Market” এবং ওইটা ঘিরে যে লিটারেচারটা তৈরি হইছিলো তার নাম “Onitsha Market Literature” যেখানে মেইনলি আপনি কিভাবে মেয়ে পটাইতে পারবেন, বেশি টাকা আয় করতে পারবেন, এইসব জিনিস নিয়ে ডিসকাস করা হইতো। এমন বই বিক্রি করা হইতো জনসাধারণ এর জন্যে, যেগুলোর জনপ্রিয়তা অবশ্যই ছিল এবং এটাকে সেল্ফ-হেল্প যে লিটারেচার আছে, তার বুর্জোয়া মুভমেন্ট বা সহজ ভাষায় বললে টাকা আয় করা যায় এমন একটা আন্দোলনের সূচনা করে সেল্ফ-হেল্পকে কেন্দ্র করে। এরপরে যুক্তরাষ্ট্রে একটা নতুন মুভমেন্ট এর শুরু হয় যার নাম “নিউ থট(New Thought)” যেটা মূলত প্রচার করে আপনাকে জীবনে সফল হইতে হইলে আপনার মনের উপরে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে, কাইন্ড অফ দা পাওয়ার অফ পজিটিভ থিংকিং। আপনি পজিটিভভাবে সারাদিন চিন্তা করতেছেন কিনা। The Law of attraction যেটার নাম অনেকবার আপনি শুনছেন।

Aaha!

Rhonda Byrne এর “The Secret” বইগুলো, এগুলা সব এই জাতীয় মুভমেন্ট এর ভিতরে পরে। ইতিহাসের এই সময়টাতে সেল্ফ-হেল্প জনরাটা ওয়ার্কিং ক্লাসের কাছ থেকে আস্তে আস্তে ক্যাপিটালিস্টদের হাতে চলে আসা শুরু করে। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী আছে।১৮৫৯ সাল, লেখকের নাম Samuel Smiles, উনি একটা বই লিখেন যার নামই হইতেছে “Self-Help”।উনি ওইখানে Argue করেন মানুষের জীবনে ব্যর্থতার পিছনে সে মূলত নিজেই দায়ী। যেমন আপনি আজকে গরীব, উনি বলতেছে তার কারণ আপনি পরিশ্রম করেন নাই, আপনি অলস ছিলেন, আপনি উল্টাপাল্টা খরচ করছেন, এই কারণে আপনি আজকে গরীব! কিন্তু আমরা এখন জানি, এই ব্যাপারগুলা আসলে সত্যি না। এইটার ব্যাখ্যাটা একটু পরে দিতেছি, কিন্তু এই স্যামুয়েল স্মাইলস তার সেই “Self-Help” বইয়ের মাধ্যমে ওই সময়ে ব্যাপক পরিমাণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন এবং একজন সেলিব্রেটি হয়ে যান। খেয়াল করেন, আমি কিন্তু কথা বলতেছি ১৮৫০-১৯০০ সালের মধ্যবর্তী সময়ের। তখনই এমন কিছু লক্ষণ আপনারা দেখতে পাইতেছেন যেই লক্ষণগুলার বহিঃপ্রকাশ আজকেও আমরা বাংলাদেশের মধ্যে দেখতে পাই। স্যামুয়েল স্মাইলস এর সেই সেল্ফ হেল্প নামক মোটিভেশনাল বইটা কতটা সফল আপনি একবার চিন্তা করেন! Charles Dickens তখন একটা উপন্যাস লিখছিলো, উপন্যাসটির নাম “Great Expectations”। ওইখানে একটা লোকের কথা বলা হয় যার নাম “পিপ(Pip)” যে গ্রামের একজন গরীব মানুষ, একজন কামারের ছাত্র ছিলো। ওয় হঠাৎ কইরা অনেক টাকা পেয়ে গেসে এবং ওর ভাগ্য রীতিমত পরিবর্তিত হয়ে গেসে। এইটা নিয়েই পুরা কাহিনী। তবে গল্পের মোরাল থিমটা ছিল এইটা: আপনি আপনার জীবনে সম্পদ চান বা টাকা পয়সা চান, সমাজে আপনি প্রতিষ্ঠিত হইতে চান, এই জিনিসগুলা দিয়ে আপনার লাইফে আসলে খুব বেশি কিছু আসে যায় না। বরং তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে আপনার সাথে মানুষের সম্পর্ক/আত্মীয়তা, আপনি যার সাথে কাজ করতেছেন, ডিল করতেছেন তার প্রতি আপনি কতটা লয়াল। আপনি মানসিকভাবে কতটা সজাগ। এই ব্যাপারগুলা টাকা-পয়সা বা সামাজিক উচু শ্রেণীতে উঠার চাইতে আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আচ্ছা, চার্লস ডিকেন্স এগুলো নিয়ে উপন্যাস লিখছে, সমসাময়িক ভাবে স্যামুয়েল স্মাইলস ঠিক উল্টা জিনিস নিয়ে বই লিখছে যেখানে বলা হইসে টাকা-পয়সা আপনাকে আয় করতে হবে, তা না হইলে আপনি ব্যর্থ, আপনি একজন অলস মানুষ! চলেন, তাহলে দেখি কোন বইটা কত বিক্রি হইসে! চার্লস ডিকেন্স এর Great Expectations বইটা পাবলিশ হওয়ার প্রথম বছরেই বিক্রি হইসে ৩৭৫০ কপি, আর স্যামুয়েল স্মাইলস এর Self-Help বইটা প্রথম বছরে বিক্রি হইসে ২০,০০০ কপি! চার্লস ডিকেন্স এর মত মানুষের উপন্যাস সেই সময়ও মানুষ খায় নাই, যদি এটাকে আপনি আত্ম-উন্নয়নমূলক মোটিভেশনাল বইয়ের সাথে তুলনা করেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এই সেল্ফ হেল্প ইন্ডাস্ট্রির এতবড় উত্থান দেইখা যারা আসল লেখক ছিলেন/ঔপন্যাসিক ছিলেন, ওরা কিন্তু এইটার ভালই সমালোচনা শুরু করছিলেন। এই জিনিসটা কি আপনার পরিচিত লাগে? কি, লাগে লাগে? একদম! বাংলাদেশে প্রত্যেক বছর বইমেলা আসলে ঠিক এই কাহিনীটাই হয় না? তখনকার দিনে কিছু বই ছিল “How to read a book”, “How to write a book in a week”, কিভাবে পড়বেন কিভাবে লিখবেন।

বড় উপকার হইলো…

Virginia Woolf, খুবই বিখ্যাত লেখক। উনিও ওইসময় একটা কথা বলছিলেন,

The only advice, indeed, that one person needs to give another about reading is to take no advice.

পড়ার ব্যাপারে একজন মানুষ অন্য একজন মানুষকে যদি উপদেশ দিতেই চায়, তাইলে একটাই উপদেশ দিতে পারে সেটা হচ্ছে এই ব্যাপারে কারো কাছ থেকে উপদেশ নিও না!

এইভাবে সেল্ফ-হেল্প ইন্ডাস্ট্রির এত বড় ধরনের সমালোচনা তখনকার ঔপন্যাসিকরা করতেন। 

 

মোটিভেশনাল যেই বইগুলা আছে, ওইখানে আপনাকে অনেক বেশি পরিমাণে এইটা বিশ্বাস করাইতে চাওয়া হয় যে, আমি আপনাকে মোটিভেশন দেওয়ার মাধ্যমে ভালো করতে চাইতেছি। ব্যাপারটা অনেক নভেল দৃষ্টিতে দেখানো হয়, কিন্তু আসলে ব্যাপারটা এতটা নভেল না! Max Weber তার “Spirit of Capitalism” এর ডেস্ক্রিপশনে দেখাইসেন Benjamin Franklin এর মতো সেল্ফ-হেল্প গুরু টাইপ যারা আছে ওরা যেই সাজেশনগুলা দেয়, ওই সাজেশনগুলা প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তির নিজের উন্নতির জন্য না, বরং একটা ক্যাপিটালিস্ট অরগানাইজেশন এর সামগ্রিক উন্নতির জন্যে ব্যবহৃত হয়! কিছু উদাহরণ দেই।

 

সম্প্রতি গিগ ওয়ার্কারদের নিয়ে অনেক কথা হইতেছে, Zomato এর একটা এড এর মধ্যে Hrithik Roshan কে কেও একজন খাবার ডিলিভারি দিতে গেসে(একজন গিগ ওয়ার্কার)। গিগ ওয়ার্কার মানে হচ্ছে ফুড ডেলিভারি ম্যান, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যারা কাজ করে। ওই লোক আসছে ঋত্বিক রোশনকে খাবার দিতে, ওর মনে হইসে ছবি তুলবে, তো ঋত্বিক রোশন বলছে আমি একটু আসতেছি।

Ruko jara.. sabar karo…

এর মধ্যে ওর কাছে আরেকটা কল আসছে এবং ওকে ওইসময়ই চইলা যাইতে হইসে। ঋত্বিক রোশনের সাথে ওর ছবি তোলা হয় নাই। এই জিনিসটা ওরা পজিটিভ হিসেবে দেখানোর ট্রাই করছে, কিন্তু আসলেই কি জিনিসটা পজিটিভ? এই মানুষটাকে কেন এতো দৌড় এর উপরে থাকতে হইতেছে? তার কারণ কোম্পানি থেকে ওকে বইলা দেয়া হইসে আপনি আজকে সারাদিনে যত বেশি ট্রিপ দিতে পারবেন, তত বেশি আপনার বেতন আসবে বা টাকা আসবে। তাই এসব কারণে অনেক গিগ ওয়ার্কার নিজেরা না খায়া রাস্তার মধ্যে রং সাইড এ গাড়ি চালায়া আপনাকে ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে খাবার ডেলিভারি দেওয়ার চেষ্টা করে!

সাদমান সাদিকের কথা:- “এটার মেটাফোরটা যদি আমি এক্সপ্লেইন করি আপনাদের সামনে…

The expression boy is in blue panjabi.

জিনিসটা হচ্ছে অনেকটা এরকম যে একজন আপনার জন্য কাজ করতেছে, এতই কাজ করছে যে সে আর মুভ করতে পারতেছে না, সে লিটারেলি Crawl করতেছে। এবং তখন আপনি ক্যামেরা ওর দিকে ধরছেন, যে দেখেন কত্ত ভালো হার্ড ওয়ার্কার সে Crawl করে হইলেও ডেলিভারিটা দিবেন। সো আপনি ওকে Exploit করে ওই অবস্থানে নিছেন, তারপর ওই অবস্থানের উপর কাজ করার জন্য তাকে গ্লোরিফাই করতেছেন।”

তার মানে এখানে সিস্টেম এর যে একটা Flaw আছে, এইটাকে আমরা গ্লোরিফাই করলাম না,পুরা দোষটা চাপায়া দিলাম ওই মানুষটার উপরে, এই মানুষটারও যে একটা খাওয়ার সময়ের অধিকার আছে, তার পছন্দের সেলিব্রেটির সাথে একটা ছবি তোলার অধিকার আছে, মোটিভেশন ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু এইটাকে গ্লোরিফাই করতেছে না! এই কারণে মোটিভেশন ইন্ডাস্ট্রি যখন আপনাকে বলে আপনার গরীবানার জন্যে আপনি আসলে নিজেই দায়ী ঠিক সেই সময় ক্যালিফোর্নিয়াতে Property 22 নিয়ে কিন্তু অনেক আন্দোলন হয়। ২০২০ সালে এই গিগ ওয়ার্কারদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন হইসে। উবার এর মতো রাইড শেয়ারিং কোম্পানির যে ড্রাইভাররা আছে, ওদেরকে আপনার মিনিমাম একটা বেতন দিতে হবে, তাদের মেডিকেল ফ্যাসিলিটি আপনাকে দিতে হবে, এগুলা কিন্তু কোম্পানিকে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হইসিলো। 

 

আরেকটা বই এর উদাহরণে যাই। Stephen Covey এর “The 7 Habits of Highly Effective People“।

এই বইটা অনেক জনপ্রিয়, আপনারা অনেকেই হয়তো পড়ছেন। এখানে রিএকটিভ আর প্রো-একটিভ লেঙ্গুয়েজ এর মধ্যে আপনাকে পার্থক্যকরণ শিখানো হইসে। যেমন কোনোদিন বলবেন না “There’s nothing I can do”, বরং আপনাকে বলতে হবে “Let’s look at our alternatives”. “That’s just the way I am”, উহু এইটা বলা যাবে না, বলতে হবে “I can choose a different approach”. এইযে দেখেন, এইখানে রিএকটিভ লেঙ্গুয়েজ বলতে সেইসব লাইনগুলাকে বুঝানো হইসে যেখানে আপনি অথেনটিকভাবে আপনি আপনার মনের কথাটা কিন্তু প্রকাশ করতেছেন। তা না কইরা স্টিভেন কোভে আপনাকে বলতেছে আপনি এটাকে একটু ফেক করেন, আপনি এটাকে একটু সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ভাবে সবার কাছে আনেন যাতে এটা কারো মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি না করে। প্রথম দেখাতে আমি বুঝছি আপনার কাছে মনে হইসে এইটা আসলে করাই উচিত বা এইটা একটা ভালো জিনিস। কিন্তু এটার সমালোচনাটা খেয়াল করেন, এইযে প্রকাশ্যে আপনি আপনার বসের সম্বন্ধে সমালোচনা করতে পারতেছেন না, আপনার ঊর্ধ্বতন কারো সমালোচনা করতে পারতেছেন না আপনার অরগানাইজেশন এর ভিতরে। এইটা তো একটা সেন্সরশিপ, আপনি নিজেকে সেন্সর করতেছেন।এই সেন্সরশিপ কে Judith Butler নাম দিয়েছেন “Implicit Censorship” যেখানে নিজের মতামতকে দাবায়া রাইখা সামাজিক স্বীকৃত একটা লেঙ্গুয়েজ বলাকে প্রোডাক্টটিভ বা উৎপাদনমূলক বলা হয়। কারণ আপনি যদি বসের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাহলে আপনার তো প্রমোশন হবে না।এরকম করতে করতে একটা অরগানাইজেশন এর মধ্যে একটা ক্রিটিকাল ভয়েস বা যারা সমালোচনা করতো এই ভয়েসগুলা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়।এই ধরনের অরগানাইজেশন কে বলা হয় সাইলেন্ট অরগানাইজেশন। যেখানে কেও নিজেদের কাজের সমালোচনা আর করে না, চাইলেও করে না কারণ তারা নিজেরা ইমপ্লিসিট সেন্সরশিপ এর ভিতরে চইলা গেসে। এইটার গ্রেটার ইমপ্যাক্টটা কী? আপনি পরবর্তিতে খুব বড় ধরনের অন্যায় আপনার সামনে হইতে দেখলেও আপনি চাইবেন সেটা সোসাইটিতে এক্সেপটেবল ওয়েতে সেইটাকে প্রেজেন্ট করতে যাতে কোনো ঝামেলা না হয় এবং আপনি নিজে প্রোডাক্টিভ থাকেন। তাই এইটা যদি একটা রাষ্ট্রের সবগুলা মানুষের মধ্যে ছড়ায়া যায়, তাইলে চিন্তা করেন ওই পুরা জাতিটাই কিন্তু সাইলেন্ট অরগানাইজেশন হয়ে যাবে, তারা অন্যায় এর বিরুদ্ধে আর কোনো কথা বলবে না।

 

এইবার আসা যাক, ডেল কার্নেগীর ব্যাপারটা কী! ডেল কার্নেগী যখন তার কাজ শুরু করছেন, সেই সময় কিন্তু গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দা হইসিলো ১৯৩০ এর দিকে। যখন গ্রেট ডিপ্রেশন শেষ হইসে, তখন মানুষজনের অবস্থা খুবই খারাপ। তারা চিন্তা করতে থাকলো তাদের এই মিজারি বা দরিদ্রতার জন্যে হয়তো তারা নিজেরাই দায়ী। তখন তারা Seek করতো কিভাবে নিজেদেরকে অনেক বেশি উন্নত করা যায়। ওইসময়ই ডেল কার্নেগী এর মতোন মানুষরা তাদের সামনে দেবদূতের মতো হাজির হন। করপোরেট ম্যানেজমেন্ট এর ভিতরে আপনি আপনার আশেপাশের মানুষকে কিভাবে ইনফ্লুয়েন্স করতে পারেন, কিভাবে অন্য মানুষকে নিজের বন্ধু বানাইতে পারেন, এই ব্যাপারগুলা আপনার প্রমোশনে অনেক বেশি ইফেক্ট ফেলতো।তাই ডেল কার্নেগীর মতো মানুষরা যখন এগুলাকে সিস্টেমেটিক ভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করা শুরু করছেন, তখন এগুলো মানুষের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে জনপ্রিয়তা পাইসে। একবার ডেল কার্নেগী তার এক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করছে যে ভাই আপনি কি পুরাপুরিভাবে সুখী? এই লোকটা বলছিল “হ্যাঁ,আমি সুখী”। ডেল কার্নেগী তখন একেবারে ভ্যাবাচেকা খায়া গেসে, অনেক ভয় পায়া গেসে, যে একটা মানুষ কিভাবে পুরোপুরি সুখী হইতে পারে এইটা চিন্তা কইরা! তার কারণ এমন একটা পৃথিবী আপনি চিন্তা করেন যেইখানে সবগুলা মানুষ সুখী সেইখানে কিন্তু কোনো ডেল কার্নেগীকে আপনার দরকার নাই। আপনাকে মোটিভেশন দেওয়ার জন্যে কোনো সেমিনার এরেঞ্জ করার দরকার নাই, কোনো ইউটিউব ভিডিও বানানোর দরকার নাই।কারণ আপনি আপনার নিজের অবস্থা নিয়ে সুখী।এইটা যুগে যুগে ডেল কার্নেগীদের জন্যে কিন্তু একটা অশনি সংকেত, একটা অশুভ বার্তা!

এমনকি ডেল কার্নেগী যে মেথডগুলা বলছেন, তার উপরে রিসার্চও হইসে, জার্নাল অফ পার্সোনালিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সাইকোলজি, এইখানে ডেল কার্নেগীর How to Win Friends and Influence People বইটার একটা মেথড এর সমালোচনা করা হইসে। বইটাতে বলা হইসে আপনি অন্য একজন মানুষের থট/চিন্তা ভাবনা, তার ফিলিংস, এটিটিউড কিংবা তার মানসিক অবস্থা, এইটা দেখে আপনি তার ভিতরের একটা INSIGHT পাবেন। কিন্তু এই স্টাডিতে ২৫টা এক্সপেরিমেন্ট করা হয় বিভিন্ন মুখের এক্সপ্রেশন ও বডির এক্সপ্রেশন দিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় এটা আসল নাকি ফেক? একজন কি মিথ্যা বলতেছে নাকি সত্যি বলতেছে? এটা আপনি বডি এক্সপ্রেশন থেকে কতটুকু বুঝতে পারতেছেন! রেজাল্ট এ দেখা গেলো বেশিরভাগ প্রেডিকশনই আসলে সফল হয় নাই, ভুল ছিল। তাই রিসার্চাররা যেটা সাজেস্ট করছে, বডি এক্সপ্রেশন বা মেন্টাল স্টেট দেখার চেয়ে ডিরেক্ট কথা বলার মাধ্যমে অনেক সময়ই আপনি অন্যপাশের মানুষকে আরো বেশি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

 

ডেল কার্নেগীর সুইসাইড বা আত্মহত্যাটা উনি আসলেই নিজে করছিলেন কিনা এটা নিয়ে অনেক জগাখিচুড়ী আছে।

বিদায় বস!

অফিসিয়ালি যেটা বলা হইসে, উনি ১৯৫৫ সালের নভেম্বর এর ১ তারিখে মারা যান। এটা ডেল কার্নেগী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ইনকর্পোরেড থেকে অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট এর মাধ্যমে বলা হইসে। তার একটা রোগ ছিল, নাম Hodgkin’s Lymphoma। এটা তৎকালীন সময়ে আসলে incurable ছিলো, চিকিৎসা করে ভালো করা সম্ভব না। তার পরিবার থেকে বলা হয় তিনি আসলে অনেকদিনের জন্যে অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু উল্টা পাশে যারা বিশ্বাস করে ডেল কার্নেগী আত্মহত্যা করছিলো, তারা বলে এই সময়টাতে আসলে ডেল কার্নেগী ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন এর মধ্যে ছিলেন যেটা তৎকালীন সময়ে ধরাও অনেকটা অসম্ভব ছিল। তার ফলস্বরূপ, তিনি আত্মহত্যা করেন, যদিও এইটার সত্যতা কতটুকু সেই ব্যাপারে অনেক সন্দেহ আছে। বরং সে একটা আরবান লিজেন্ড হয়ে গেসে এই কারণে যে একজন মোটিভেশনাল স্পিকার, এত বড় একজন মানুষ, সে লাস্ট পর্যন্ত নিজেই ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে পইরা আত্মহত্যা করছে, এই ব্যাপারটা অনেক মুখরোচক এবং গল্প হিসেবে সবার কাছে আকর্ষণীয়।

🥴😵

আজ এ পর্যন্তই, আমি আশা করি একটা হালকা আইডিয়া পাইসেন মোটিভেশন ইন্ডাস্ট্রি এন্ড পার্সোনাল ডেভলপমেন্ট এর গোল ও সেমিনার গুলো আছে, তাদের মেইন উদ্দেশ্য আসলে কী হইতে পারে!

আর আসলেই আপনার নিজের ব্যার্থতার জন্যে শুধুমাত্র আপনি নিজেই দায়ী কিনা, নাকি এর পিছনে পুরা সিস্টেম এরও একটা হাত থাকতে পারে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।

 

পুরো ভিডিও দেখেন ইউটিউবে!

Research Lead: 

Labid Rahat: https://www.youtube.com/channel/UCTio…

Alif Arshad: https://www.facebook.com/alif.arshad.b

Affiliate: Enayet Chowdhury

For Gaining more knowledge on this topic:-

How Dale Carnegie’s self-help movement is now more about entitlement than enlightenment

Dale Carnegie feared failure before “How to Make Friends and Influence People”

What Dale Carnegie’s “How to Win Friends and Influence People” Can Teach the Modern Worker

People who dislike Dale Carnegie’s “How To Win Friends & Influence People” are hypocritical or too honest for their own good.

How to Win Friends and Influence People – Wikipedia

BOOKS OF THE TIMES; CLOSE-UP OF JOHN BELUSHI

Личная трагедия «продавца счастья»: Почему Дейл Карнеги ушел из жизни в одиночестве

Dale Carnegie, Author, Is Dead

Perspective mistaking: Accurately understanding the mind of another requires getting perspective, not taking perspective.

Hope or Hype? The Post Critiques Carnegie’s Bestseller

The Radical Origins of Self-Help Literature

Review: ‘Self-Help Messiah,’ By Steven Watts

Written by

Girgiti

23 Posts

We're Girgiti. We provide blog managing services to renowned YouTubers. Currently working with Enayet Chowdhury. Hoping to enhance the working area soon.E-mail: [email protected] | Follow us on facebook for regular post updates of this blog: Girgiti
View all posts

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *