বুদ্ধিজীবী হত্যার মাস্টারপ্ল্যান কাদের ছিল? Martyred Intellectuals Day | Explained, Enayet Chowdhury

আজকে ১৪ই ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।আমি খুবই অবাক হইসি, সোশ্যাল মিডিয়াতে এই বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে অনেকগুলা Conspiracy theory টাইপের জিনিসপত্র আছে। যেমন অনেকেই বিশ্বাস করে এই বুদ্ধিজীবী গণহত্যা নাকি ভারতের দ্বারা সংঘটিত হইসে! জহির রায়হানের মৃত্যু নিয়েও অনেকগুলা Conspiracy theory আমি শুনছি। মূল কথা হইতেছে এই Conspiracy theory গুলা debunk করতে আমি আজকে আসি

Henry Kissinger
Source: www.britannica.com

নাই… তবে আজকে কথা বলবো হেনরি কিসিঞ্জার(Henry Kissinger) ১৪ ই ডিসেম্বরের আগে একটা গোপন বৈঠক করার মাধ্যমে কিভাবে চীনকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছিলো এবং এর কারণেই ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী তো আত্মসমর্পণ করছেই, তার আগেই আসলে আত্মসমর্পণ করার কথা ছিল, এই ব্যাপারটা আসলে কী হইসে? বাংলাদেশে কোন কোন বুদ্ধিজীবী সে সময়ে বেঁচে ফিরছিলেন এবং তারা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কত বড় অবদান রাখছেন? বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি হইতে আসলে এত পরিমাণে দেরি হয় কেন? এই পুরো ব্যাপারটি আমি আজকে আলোচনা করবো, তো চলুন শুরু করা যাক।

 

২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে ইলেকশনটা হইসিলো ওইখানে হিলারি ক্লিনটন(Hillary Clinton) আর বার্নি সেন্ডার্স(Bernie Sanders) এর মধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির নমিনেশন নিয়ে কিন্তু একটা ভালো বিতর্ক হয়। শেষমেশ ফায়দা কেউই করতে পারে নাই, ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতছিলো। হিলারি ক্লিনটন হেনরি কিসিঞ্জারকে ওর আইডল বলছিলো। তখন বার্নি সেন্ডার্স হিলারি ক্লিনটনকে মনে করিয়ে দিসে, এই হেনরি কিসিঞ্জার চিলি আর কম্বোডিয়াসহ আরেকটা দেশের গণহত্যার সাথে সরাসরি জড়িত আর সেই দেশটার নাম বাংলাদেশ।

The debate

হোয়াইট হাউস থেকে ফাঁস হওয়া বিভিন্ন টেপ এবং ডিক্লাসিফাইড ডকুমেন্ট এর মাধ্যমে দেখা যায় হেনরি কিসিঞ্জার এর খুবই অদ্ভুত একটা ডিপ্লোমেটিক মুভ এর কারণে পাকিস্তান আর্মির আত্মসমর্পণ delay বা দেরী করা হয় এবং এই সুযোগে ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ বুদ্ধিজীবীদের এত বড় একটা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত কর সম্ভব হয়। ঘটনা হইতেছে, ডিসেম্বরের ৯ তারিখ জেনারেল ইয়াহিয়া খান ইস্টার্ন কমান্ড এ গভর্নরকে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে বলেন এবং এরপর থেকেই ওরা আত্মসমর্পণের একট প্রস্তুতি নিতে থাকে। কিন্তু ১১ তারিখ হঠাৎ করে আরেকটা টেলিগ্রাম আসে যেখানে ইয়াহিয়া খান বলতে থাকে, “Do not, repeat, do not take any action on my last message to you. Very important diplomatic and military moves are taking place by our friends.” ডিসেম্বরের ৯ আর ১১ তারিখ আসলে কী হইসিলো? নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন(Manhattan) এর পূর্ব দিকে একটা সেফ হাউজে হেনরি কিসিঞ্জার এবং চীনের তৎকালীন জাতিসংঘের পার্মানেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ হুয়াং হুয়া(Huang Hua) এর মধ্যে একটা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

Smiling Huang Hua

ওদের ফাঁস হওয়া কথোপকথনের মাঝে দেখা যায় হেনরি কিসিঞ্জার ডেসপারেট ভাবে চীনকে এইটা বলে কনভিন্স করার চেষ্টা করতেছে যে তোমরা ওইদিক দিয়ে ইন্ডিয়ান বর্ডার এর দিকে আক্রমণ চালাও। তাইলে বাংলাদেশ আর পাকিস্তান এর মধ্যে যে যুদ্ধটা চলতেছে সেটা একটা রিজিওনাল বা আঞ্চলিক কনফ্লিক্ট থেকে একটা গ্লোবাল কনফ্লিক্ট এ পরিণত হবে। এর মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরাজয় তারাতারি ঠেকানো যাবে। শুধুমাত্র এই মেসেজটার কারণে পাকিস্তান আর্মির আত্মসমর্পণ দেরী করা হয় এবং এর মাধ্যমে তারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার যে ঘৃণ্য পরিকল্পনাটা ছিল ১৪ই ডিসেম্বরে, সেটাকে বাস্তবায়ন করার সুযোগ পায়। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় ইন্ডিয়ার বর্ডার এ চীন কোনো প্রকার আক্রমণ করে নাই। যুক্তরাষ্ট্রের যে সপ্তম নৌবহর(Seventh Fleet) টা ছিল, তার পিছনে সোভিয়েত ইউনিয়নের আরেকটা নৌবহর ছিলো। এগুলা বাংলাদেশের উপকূলে পৌঁছাইতেও পারে নাই। শেষ পর্যন্ত ১৬ই ডিসেম্বরে পাকিস্তান আর্মি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হইসে যেইটা ওরা আরো আগেই হয়তো করতে পারতো। এতক্ষণ এই যে পুরো ঘটনাটা ব্যাখ্যা করলাম, এটাকে একটা ফ্যাক্ট হিসেবে চিন্তা না করে একটা assumption হিসেবে চিন্তা করাটা বেটার।তার কারণ ওই কনভারসেশনের ভিতরে তার উদ্দেশ্য কী ছিল, এইটাকে ফ্যাক্ট আকারে আসলে প্রকাশ করা যায় না। তবে Princeton University এর প্রফেসর Gary J. Bass, ওনার একটা রচনা আছে “The Blood Telegram: Nixon, Kissinger and a Forgotten Genocide” যেখানে উনি দাবি করেন নিক্সন আর কিসিঞ্জার ওয়াটার গেট, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনাম এর মধ্যে যে কুকাম চালাইছিলো, এইটাকে খুব ভালোভাবে স্যানিটাইজ করতে পারছে(ওদের হাতের ময়লা ঝাইড়া ফেলতে পারছে), কিন্তু বাংলাদেশের এই গণহত্যার ক্ষেত্রে ওরা এই কাজটা খুব সফলভাবে করতে পারে নাই।এইটা তিনি এই বইয়ের মধ্যে দাবি করছেন।

 

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এই ধরনের বুদ্ধিজীবী নিধনের যে কর্মকাণ্ড, এইটা ইতিহাসে এর আগে কখন হইসে বা কেন হইসে! এইটা প্রথম World War II এর সময় নাৎসি জার্মানি অনুসরণ করে। এইটাকে বলা হয় “The Intelligenzaktion Pommern”(কি নাম দিছে এগুলা!🥴)। জার্মানদের একটা আলাদা বিশ্বাস ছিলো, ওরা বিশ্বাস করতো ওরা হলো মাস্টার রেস। ওদের জিন হলো সর্বশ্রেষ্ঠ এবং জার্মান জাতিই আসলে এক্সিস্ট করার যোগ্যতা রাখে। ওরা পোল্যান্ড এর যেই বুদ্ধিজীবী শ্রেণী ছিল, ওদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার প্ল্যান করছিলো। কারণ ওরা বুঝতে পারছিলো পোলিশদেরকে ক্রীতদাস হিসেবে ট্রিট করার ক্ষেত্রে পোল্যান্ড এর এই বুদ্ধিজীবীরাই তাদের সবচেয়ে বড় বাঁধা। যুদ্ধের প্রথম মাসে প্রায় ৬০,০০০ জন মানুষকে মারা হইসিলো! ওদের একজন কমান্ডার এইটা বলছিলো, পোলিশ বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নেওয়া হইসিলো, এইটা কমপ্লিট হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে ২৫০ জনের মত পোলিশ বুদ্ধিজীবীকে মারা হইসে এবং যারা জার্মানকে ঘৃণা করতো কিংবা জার্মানকে ঘৃণা করার প্ররোচনা দিতো, ওদেরকেও শেষ করে দেয়া হইসে। বুদ্ধিজীবীদের নিধনের মাধ্যমে আপনার নিজের জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা, এই ধারণাটা আসলে নতুন কিছু না। 

 

বাংলাদেশের সে সময়কার বুদ্ধিজীবীরা যদি আজও বেচেঁ থাকতেন, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা আরো কতটা ভালো হইতো? এইটা আমরা একটু আন্দাজ করতে পারি সে সময়ে যে বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বেচেঁ ফিরছিলেন, তারা কতটা ইমপ্যাক্ট রাখছে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের ক্ষেত্রে।

প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক

দেখেন, আব্দুর রাজ্জাক স্যার কিন্তু সেই ১৯৬০ এর সময় থেকেই অ্যান্টি আইয়ুব বা আইয়ুব খানের সরকার বিরোধী যে আন্দোলনটা ছিল, ওই আন্দোলনে উনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতো। সেই সময়কার সরকার উনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইসিলো যে উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, উনার শিক্ষক পদ বাতিল করে দেওয়া হোক। কিন্তু ওরা এই যুক্তিটা কোর্ট বা আদালতে establish করতে ব্যর্থ হয়। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যে তীব্র গণহত্যা চালানো হইসিলো, সেইটা উনি নিজের চোখে দেখছেন। ওনাকে গ্রেফতার করার জন্য পাকিস্তানি বাহিনী ওনার বাড়িতে আসছিলো, কিন্তু দরজায় লাত্থির শব্দ শোনার পর থেকে উনি বাসা থেকে পালায় যাইতে সক্ষম হন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়টা উনি উনার গ্রামে আত্মগোপনে থাকেন এবং এইভাবে উনি সেই সময়কার বুদ্ধিজীবী নিধনের হাত থেকে রক্ষা পান। আব্দুর রাজ্জাক স্যার এর ৬ দফা আন্দোলন এর মধ্যেও বিশাল একটা অবদান আছে। উনি সেই সময়ই বুঝতে পারছিলেন পাকিস্তান উভয় অংশের মধ্যে যে অর্থনৈতিক বৈষম্যটা আছে, এই বৈষম্যটার কারণেই আলটিমেটলি পাকিস্তান ফল করবে। আর আশা করি এখন আপনারা জানেন আব্দুর রাজ্জাক স্যার কত বড় মাপের একজন মানুষ ছিলেন, ইভেন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও।

• মুসা সাদিক। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক সচিব। উনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের রণাঙ্গন সংবাদদাতা। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে উনি তিনটা বই লিখছেন। “Bangladesh wins freedom”, “মুক্তিযুদ্ধ হৃদয়ে মম” এই বইগুলা ইতিহাসবিদ ছাড়াও সকল শ্রেণীর পাঠকের কাছে সমাদৃত হইসিলো।

রেহমান সোবহান স্যার

উনি কিন্তু কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে আসার পর মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অধ্যাপকরা ছিলেন, উনারা পুরোপুরিভাবে পাকিস্তান বিরোধিতা করতেন এবং রেহমান সোবহান স্যারও এর কোনো ব্যাতিক্রম ছিলেন না। তখনকার পাকিস্তানে ১৯৬১ সালে উনি একটা কনফারেন্সের মধ্যে সরাসরি সবার সামনে “Two Economy” থিওরি বলেন এবং তখন কেও একজন উনাকে মনে করিয়ে দেন যে পাকিস্তান কিন্তু মার্শাল ল’ এর আন্ডারে আছে। আপনি এইসব কথা এই মুহূর্তে বলতে পারেন না। কিন্তু তার পরেও উনি সাহস করে এই কথাগুলা সবার সামনে তুলে ধরতেন। ২৫শে মার্চ ১৯৭১, পাকিস্তানি বাহিনীর সেই গণহত্যা চালানোর পরে রেহমান সোবহান স্যার যিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুব কাছের একজন বন্ধু ছিলেন, উনি পলাতক থাকেন। উনি শেষ পর্যন্ত বর্ডার বা সীমান্তের মধ্যে মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা খান কারণ ওরা ভাবছিলো উনি মনে হয় অবাঙালি। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় তাকে সে সময় রক্ষা করে এবং সবাই বুঝতে পারে উনি সেই সময়কার বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেন এমন বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অন্যতম একজন বুদ্ধিজীবী। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তার হাতে একটা বড় দায়িত্ত্ব দেওয়া হয় যেখানে উনি একজন যাযাবর রাষ্ট্রদূতের মত কাজ করেন, বাইরের সব দেশে দেশে এইটা প্রচার করে বেড়ান যেনো বাংলাদেশের জন্য সাপোর্ট আরো বেশি শক্তিশালী হয় এবং পাকিস্তানের কাছে যেকোনো ধরনের সহায়তা যেন পৌঁছাতে না পারে। এই যে বুদ্ধিজীবীরা যারা ১৪ ই ডিসেম্বরে বেচেঁ গেছিলেন, উনারা কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে বিশাল পরিমাণ অবদান রাখছেন!

 

আরেকটা প্রশ্ন সবসময় আসে, বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা আসলে কত? এটা নিয়া নানা ধরনের বিতর্ক আছে।শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ, এইখানে ৩২৮ জন বুদ্ধিজীবীর নাম ইনক্লুড করা আছে, কিন্তু বইলা দেওয়া হইসে এইটা একদম কমপ্লিট লিস্ট না। একটা সরকারি ডকুমেন্টারি আছে যার নাম “বাংলাদেশ”। এইখানে বলা হয় ১১০৯ জন বুদ্ধিজীবী ছিলেন যারা শহীদ হইছিলেন। তবে যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ অনেকেই বলে থাকেন এই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা আসলে আরো অনেক বেশি। ১৯৭২ সালে এই কাজের জন্যে একটা কমিটি করা হয়, কমিটির নাম হচ্ছে “বুদ্ধিজীবী নিধন তথ্যানুসন্ধান কমিটি”।ওইখানে একটা প্রাথমিক তালিকা করা হইসিলো যেখানে প্রায় ২০,০০০ জন বুদ্ধিজীবীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশে আসলে কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এই বুদ্ধিজীবী তালিকা করতে অনেক বেশি দেরী হইসিলো। যেমন ধরেন ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৪ তে তৎকালীন যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন, উনি বলছিলেন ওই বছরের জুন নাগাদ আমরা বুদ্ধিজীবীদের একটা তালিকা তৈরি করবো। তখন মন্ত্রণালয় থেকে ডিসি বা ডেপুটি কমিশনারদেরকে ৬৪ টা জেলার মধ্যে একটা করে চিঠি পাঠানো হয় যে, দেখো তোমার জেলার মধ্যে যে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আছে ওদের নামটা আমাদের কাছে পাঠাও যেনো আমরা একটা লিস্ট আকারে দাঁড় করাইতে পারি। সমস্যাটা হইসিলো আসলে সেই জায়গায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী আপনি কাদেরকে বলবেন, এর সংজ্ঞাটা কী, এইটা কারো কাছে পরিষ্কার ছিলো না। শেষ পর্যন্ত আপাত দৃষ্টিতে কোনো নাম আসলে পাঠানো সম্ভব হয় নাই।২০১৬ সালের ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ আবারো বলা হইসিলো ওরা একটা বই পাবলিশ করবে যেখানে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা থাকবে। কিন্তু ওই বইটা এখনো পাবলিশ করা হয় নাই।২০২০ সালের নভেম্বরের ১৯ তারিখ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১১ জন সদস্য বিশিষ্ট একটা কমিটি গঠন করে যেখানে যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ, মুক্তিযোদ্ধা এবং সরকারি কর্মকর্তারাও আছেন। প্রথমে যে সিদ্ধান্তটা হইসিলো, এই কমিটি ১২২২ জনের নামের একটা তালিকা তৈরি করবে এবং এটাও বলা হইসিলো এই কমিটি শহীদ বুদ্ধিজীবী বলতে আসলে কী সংজ্ঞা দেওয়া হয় এইটাও ডিসাইড করবে। এই বছরই এই কমিটির এই লিস্টটা পাবলিশ করার কথা। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের একজন সাবেক অধ্যাপক এবং এই কমিটির একজন সদস্য, উনি বলছেন বাংলাদেশের এই ইস্যুটা নিয়ে কাজ করা অর্থাৎ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা নিয়ে কাজ করার মত যথেষ্ট প্রশিক্ষিত মানুষের বড়ই অভাব আছে। আমলাতন্ত্রে থাকা বেশিরভাগ মানুষের ইন্টারেস্টই নাই যে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করতে হবে এবং ওরাই এই পুরো সিস্টেমটা dominate করে। ওভারঅল এই কারণেই বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি করতে আসলে দেরি হইতেছে। 

 

সবশেষে পুরাটা যদি সামারি করি, হেনরি কিসিঞ্জার এবং নিক্সন এর একটা আলাদা প্ল্যান ছিলো এবং হেনরি কিসিঞ্জার এর একটা গোপন কূটনৈতিক বৈঠকের কারণে যেখানে ১৬ ই ডিসেম্বর এর আগেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ করার কথা, সেখানে সেই আত্মসমর্পণটা দেরী করা হইসে।এবং এই সুযোগেই ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ এত বড় একটা বুদ্ধিজীবী হত্যা করাটা সম্ভব হইছিলো।দ্বিতীয়ত, এই প্ল্যানটা পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনো নতুন প্ল্যান না, এইটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানিও গ্রহণ করছিলো পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তৃতীয়ত, প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক, মুসা সাদিক এবং রেহমান সোবহান এর উদাহরণ এর মাধ্যমে দেখানো হইসে সেই সময়কার বুদ্ধিজীবীরা যদি আজকেও বেচেঁ থাকতেন তাইলে বাংলাদেশে হয়তো খুব বড় একটা চেঞ্জ আমরা দেখতে পাইতাম। চার নম্বর পয়েন্ট এর মাধ্যমে প্রুভ করা হইসে বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি করার প্রসেসটা আসলে কোন সময় পর্যন্ত বা কোন সময় থেকে চলতেছিল এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে, মানুষের যথেষ্ট উৎসাহ না থাকায় এই কাজটা কেনো এতদিন পর্যন্ত দেরি হইসে!

 

তো সব মিলিয়ে আজকে এই পর্যন্তই। আজকে আমি মিম রিভিউ দিতে পারতেছি না কারণ এটা একটা সিরিয়াস টপিক। সবকিছুতে আসলে হিউমার অ্যাড করা যায়না। আশা করি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে কিছুটা নতুন ইনসাইট আপনারা এখান থেকে পেয়েছেন এবং বুদ্ধিজীবী দিবসকে নতুন একটা আঙ্গিকে দেখার জন্য এই আলোচনাটা আপনাকে হেল্প করবে। 

সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।

পুরা ভিডিও দেখেন ইউটিউবে!

Research Lead: 

Labid Rahat: https://www.youtube.com/channel/UCTio…

Alif Arshad:

https://www.facebook.com/alif.arshad.b

For Gaining more knowledge on this topic:-

The Killing of Intellectuals in the Shadow of Henry Kissinger

Why were they targeted?

The mass murder of Polish intellectuals — and the German Nazis who got away with it

Abdur Razzaq – The Myth And The Man

তরুণ প্রজন্মকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মশাল জ্বালিয়ে রাখতে হবে 

Rehman Sobhan: A public intellectual extraordinaire

• Listing Martyred Intellectuals: It begins, at last

Martyred Intellectuals: Govt finalises definition

Written by

Girgiti

23 Posts

We're Girgiti. We provide blog managing services to renowned YouTubers. Currently working with Enayet Chowdhury. Hoping to enhance the working area soon.E-mail: [email protected] | Follow us on facebook for regular post updates of this blog: Girgiti
View all posts

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *